ঢাকা , বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসছে এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত বিএনপির আপত্তিতে ক্ষোভ জামায়াতের — আরপিও সংশোধনী বহাল রাখার দাবি কৃষিজমি গিলে নিচ্ছে আবাসন, বিলুপ্তির পথে পাখি চট্টগ্রামে মেয়রের ব্যানার সরানো নিয়ে সংঘর্ষে যুবদল কর্মী নিহত, আহত ৮ ঢাকা আদালতে ভূমি দখল সংক্রান্ত নতুন আদেশ: প্রতিবেদনের নির্দেশ ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠা তাণ্ডব বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় — জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বিতর্কিত ব্যক্তিদের থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে: আমীর খসরুজেটিভি নিউজ বাংলা গুম হত্যার চেয়েও নিকৃষ্টতম অপরাধ : আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাভারে “আফজাল সন্দেশে” ভয়াবহ ভেজাল শিশু খাদ্য উৎপাদন — ময়লা, দূর্গন্ধ ও রাসায়নিকে তৈরির অভিযোগ

মানসিক স্বাস্থ্য আইনে কেবলমাত্র মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের কথাই বলা হয়েছে।

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় ০২:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

জেটিভি নিউজ বাংলা,

সাস্থ্য কথা

‎মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮ ও পর্যালোচনা

কাণ্ডজ্ঞানহীন, বিকৃতমস্তিষ্ক, উন্মাদ—নানা শব্দের সরল শব্দ হলো পাগল। মানব ইতিহাসের প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে কয়েক শতক আগ পর্যন্তও মানসিক ব্যাধির ফলে বিচিত্র আচরণকে ধরে নেওয়া হতো মগজে কোনো অশনি আত্মার অবস্থান। এ দীর্ঘ সময় মানসিক উন্মত্ততার বহুল প্রচলিত একটি চিকিৎসা ছিল মস্তিষ্কের খুলিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গোল করে কেটে দেওয়া যাতে সেই অশনি আত্মা বের হয়ে যায়। স্বভাবতই অতি রক্তক্ষরণ ও তীব্র যন্ত্রণার ফলে সে ব্যক্তিটির আচরণ হয়ে যেত মোলায়েম। ধরে নেওয়া হতো অশনি আত্মা বের হয়ে গেছে সে খুলির জানালা দিয়ে। মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আলাদা করে রাখার জন্য মধ্যযুগ পরবর্তী সময়ে ইউরোপসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে গড়ে উঠে আশ্রম। সময়ের আবর্তে মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত এ ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন হয় রাষ্ট্র। যার প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ ভারতে প্রণীত হয় ‘লুনাসি অ্যাক্ট ২০১২’ যা সীমিত আকারে মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও অধিকার সুরক্ষার একমাত্র রক্ষাকবচ হিসেবে বহাল ছিল আমাদের বাংলাদেশেও কিছুদিন আগ পর্যন্তও। বিলম্ব হলেও ২০১৮ সালে প্রণীত হয় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য আইন। এ আইনের মাধ্যমে এসেছে শব্দের পরিমার্জিত পরিবর্তন, এসেছে সময়োপযোগী বিধি-বিধান। জাতীয়ভাবে আমরা হাল আমলের আইনি কাঠামো পেয়েছি তাদের অধিকার সুরক্ষায়। তবে বিদ্যমান এ আইনটির কতিপয় বিষয়ের ওপর একজন মানসিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে কিছু গঠনমূলক আলোচনা তুলে ধরছি।

আইনে মাদকাসক্তি, মানসিক অসুস্থতা (Mental Illness), মানসিক রোগ (Mental Disorder) এবং মানসিক অক্ষমতা (Mental Disability)—এই চারটি বিষয়কে আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া, সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে কেবল মানসিক অসুস্থতায় (Mental Illness) আক্রান্ত ব্যক্তিরাই সুরক্ষা পান। ফলে, মানসিক রোগ (Mental Disorder), মাদকাসক্তি বা মানসিক অক্ষমতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা এই আইনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী মানসিক অসুস্থতা নির্ণয়ের আদর্শ মানদণ্ড (DSM-5-TR ও ICD-11) অনুযায়ী, উল্লিখিত সবকটি ধারণাকেই এককভাবে ‘Mental Disorder’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অতএব, আইনে এই সংজ্ঞায়নটি স্পষ্ট করে দেওয়া এবং কোনো০ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি কী ধরনের আইনি সুরক্ষা লাভ করবে, তার সুনির্দিষ্ট বিধান থাকা আবশ্যক।

‎ মাদকাসক্তি একটি অপরাধ বলেই মাদকাসক্তিকে আলাদা করা হয়েছে অন্যান্য মানসিক ব্যাধিগুলো থেকে। কিন্তু এ অপরাধের একটি অংশে ড্রাগ ডিলার আর অপর অংশে রয়েছে সেবনকারী। দেখা যায় সেবনকারীদের অধিকাংশই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মানদণ্ডে মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত (Substance Abuse Disorder)। মাদকের বিরুদ্ধে যেমন প্রয়োজন কঠোর আইনের প্রয়োগ, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্য আইনও মাদকদ্রব‌্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর সাথে সমন্বয় করে প্রকৃত মানসিকভাবে অসুস্থ হিসেবে চিহ্নিত মাদকসেবীদের পুনর্বাসনসহ তাদের আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করাটা এখন সময়ের প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা যায়, মাদকাসক্ত ব্যক্তি, যারা মাদকের অপব‌্যাবহারজনিত মানসিক রোগে (substance abuse disorder) আক্রান্ত, তাদের অন্যান্য আরও একাধিক মানসিক সমস্যাও (comorbidity), যেমন তীব্র বিষণ্নতা (Major Depression), উদ্বেগ (Anxiety), সাইকোসিস (Psychosis), পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার (Personality disorder)সহ ইত্যাদি। দেখা যায়, তাদের কারাদণ্ডের মতো শাস্তি আরোপ করলে মাদকাসক্তি প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পায় এবং সমাজে পুনরায় ফিরে আসতে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয় যা তার নেশা করার প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়াও এ শাস্তি তার ভেতর মর্মাঘাত (Trauma), অনিরাপদ ও লজ্জাবোধ করা, নিজেকে অর্থহীন মনে করার ফলে নানা ধরণের জটিল মানসিক সমস্যার দিকে ধাবিত করে। অথচ মানসিক স্বাস্থ্য আইনে কেবলমাত্র মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের কথাই বলা হয়েছে।

ট্যাগস

জনপ্রিয় সংবাদ

জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসছে এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা

মানসিক স্বাস্থ্য আইনে কেবলমাত্র মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের কথাই বলা হয়েছে।

আপডেট সময় ০২:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫

জেটিভি নিউজ বাংলা,

সাস্থ্য কথা

‎মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮ ও পর্যালোচনা

কাণ্ডজ্ঞানহীন, বিকৃতমস্তিষ্ক, উন্মাদ—নানা শব্দের সরল শব্দ হলো পাগল। মানব ইতিহাসের প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে কয়েক শতক আগ পর্যন্তও মানসিক ব্যাধির ফলে বিচিত্র আচরণকে ধরে নেওয়া হতো মগজে কোনো অশনি আত্মার অবস্থান। এ দীর্ঘ সময় মানসিক উন্মত্ততার বহুল প্রচলিত একটি চিকিৎসা ছিল মস্তিষ্কের খুলিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গোল করে কেটে দেওয়া যাতে সেই অশনি আত্মা বের হয়ে যায়। স্বভাবতই অতি রক্তক্ষরণ ও তীব্র যন্ত্রণার ফলে সে ব্যক্তিটির আচরণ হয়ে যেত মোলায়েম। ধরে নেওয়া হতো অশনি আত্মা বের হয়ে গেছে সে খুলির জানালা দিয়ে। মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আলাদা করে রাখার জন্য মধ্যযুগ পরবর্তী সময়ে ইউরোপসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে গড়ে উঠে আশ্রম। সময়ের আবর্তে মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত এ ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন হয় রাষ্ট্র। যার প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ ভারতে প্রণীত হয় ‘লুনাসি অ্যাক্ট ২০১২’ যা সীমিত আকারে মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও অধিকার সুরক্ষার একমাত্র রক্ষাকবচ হিসেবে বহাল ছিল আমাদের বাংলাদেশেও কিছুদিন আগ পর্যন্তও। বিলম্ব হলেও ২০১৮ সালে প্রণীত হয় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য আইন। এ আইনের মাধ্যমে এসেছে শব্দের পরিমার্জিত পরিবর্তন, এসেছে সময়োপযোগী বিধি-বিধান। জাতীয়ভাবে আমরা হাল আমলের আইনি কাঠামো পেয়েছি তাদের অধিকার সুরক্ষায়। তবে বিদ্যমান এ আইনটির কতিপয় বিষয়ের ওপর একজন মানসিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে কিছু গঠনমূলক আলোচনা তুলে ধরছি।

আইনে মাদকাসক্তি, মানসিক অসুস্থতা (Mental Illness), মানসিক রোগ (Mental Disorder) এবং মানসিক অক্ষমতা (Mental Disability)—এই চারটি বিষয়কে আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া, সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে কেবল মানসিক অসুস্থতায় (Mental Illness) আক্রান্ত ব্যক্তিরাই সুরক্ষা পান। ফলে, মানসিক রোগ (Mental Disorder), মাদকাসক্তি বা মানসিক অক্ষমতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা এই আইনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী মানসিক অসুস্থতা নির্ণয়ের আদর্শ মানদণ্ড (DSM-5-TR ও ICD-11) অনুযায়ী, উল্লিখিত সবকটি ধারণাকেই এককভাবে ‘Mental Disorder’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অতএব, আইনে এই সংজ্ঞায়নটি স্পষ্ট করে দেওয়া এবং কোনো০ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি কী ধরনের আইনি সুরক্ষা লাভ করবে, তার সুনির্দিষ্ট বিধান থাকা আবশ্যক।

‎ মাদকাসক্তি একটি অপরাধ বলেই মাদকাসক্তিকে আলাদা করা হয়েছে অন্যান্য মানসিক ব্যাধিগুলো থেকে। কিন্তু এ অপরাধের একটি অংশে ড্রাগ ডিলার আর অপর অংশে রয়েছে সেবনকারী। দেখা যায় সেবনকারীদের অধিকাংশই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মানদণ্ডে মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত (Substance Abuse Disorder)। মাদকের বিরুদ্ধে যেমন প্রয়োজন কঠোর আইনের প্রয়োগ, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্য আইনও মাদকদ্রব‌্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর সাথে সমন্বয় করে প্রকৃত মানসিকভাবে অসুস্থ হিসেবে চিহ্নিত মাদকসেবীদের পুনর্বাসনসহ তাদের আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করাটা এখন সময়ের প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা যায়, মাদকাসক্ত ব্যক্তি, যারা মাদকের অপব‌্যাবহারজনিত মানসিক রোগে (substance abuse disorder) আক্রান্ত, তাদের অন্যান্য আরও একাধিক মানসিক সমস্যাও (comorbidity), যেমন তীব্র বিষণ্নতা (Major Depression), উদ্বেগ (Anxiety), সাইকোসিস (Psychosis), পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার (Personality disorder)সহ ইত্যাদি। দেখা যায়, তাদের কারাদণ্ডের মতো শাস্তি আরোপ করলে মাদকাসক্তি প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পায় এবং সমাজে পুনরায় ফিরে আসতে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয় যা তার নেশা করার প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়াও এ শাস্তি তার ভেতর মর্মাঘাত (Trauma), অনিরাপদ ও লজ্জাবোধ করা, নিজেকে অর্থহীন মনে করার ফলে নানা ধরণের জটিল মানসিক সমস্যার দিকে ধাবিত করে। অথচ মানসিক স্বাস্থ্য আইনে কেবলমাত্র মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের কথাই বলা হয়েছে।