ছবি : সংগৃহীত, ডেস্ক নিউজ
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিশ্বাবিদ্যালয়ের ১১ হাজার ৯১৯ জন নিবন্ধিত ভোটার তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। এর মধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ১০২ জন এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৮১৭ জন। একজন ভোটারকে কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি পদে ভোট দিতে হবে। এর মধ্যে জাকসুতে ২৫টি এবং হল সংসদে ১৫টি পদ রয়েছে।
সব মিলিয়ে ৩৪০টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬২০ জন প্রার্থী, যাদের মধ্যে ৪৪৮ জন ছাত্র ও ১৭২ জন ছাত্রী। তবে হল সংসদগুলোর প্রায় ৬০ শতাংশ পদ হয় শূন্য, নয়তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলের ৩১৫টি পদের মধ্যে ১৩১টিতে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এবং ৬৮টি পদ শূন্য থাকছে। কেন্দ্রীয় সংসদে ১৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যার মধ্যে ১৩২ জন ছাত্র ও ৪৫ জন ছাত্রী।
হসভাপতি (ভিপি) পদে ১০ জন এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া নারী সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ৬ জন, পুরুষ এজিএস পদে ১০ জন এবং সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, তথ্যপ্রযুক্তি, সমাজসেবাসহ অন্যান্য পদে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ছেলেদের হলগুলোর মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম হলে সর্বোচ্চ ৯৯৪ জন, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৯৫৪ জন এবং ২১তম হলে ৭৫২ জন ভোটার রয়েছেন। মেয়েদের হলগুলোর মধ্যে বীর প্রতীক তারামন বিবি হলে সর্বোচ্চ ৯৮৩ জন, রোকেয়া হলে ৯৫৭ জন এবং ফজিলাতুন্নেছা হলে ৮০৮ জন ভোটার রয়েছেন।
গতকাল নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, হলগুলোতে ২২৪টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি হলে একজন করে রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকছেন এবং পুরো প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধানের জন্য ৬৭ জন পোলিং এজেন্ট ও ৬৭ জন সহকারী পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে শিক্ষকেরা দায়িত্ব পালন করছেন।
সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভোটকেন্দ্রগুলোতে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকের পুলিশসহ দেড় হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া সাত প্লাটুন বিজিবি ও পাঁচ প্লাটুন আনসার সদস্যও নিয়োজিত আছেন।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, প্রায় ৬ হাজার নারী ভোটারের মধ্যে ৩ হাজারের বেশি ভোট পড়লেই তা নির্বাচনের ফলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। জাকসুর চারবারের নির্বাচিত নেতা অধ্যাপক মোস্তফা এন মনসুর বলেন, 'কারা জিতবে বা হারবে, তা নির্ধারণে নারী ভোটাররা নিশ্চিতভাবেই নিয়ামক ভূমিকা পালন করবেন।'
অন্তত ১০টি হলের ২০ জন ছাত্রী এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তারা জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রার্থীদেরই সমর্থন করবেন। নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুশরিকা অদ্রি বলেন, 'আমরা তাদেরই ভোট দেব, যারা হলের সান্ধ্যআইন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন না বা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষ নেবেন না।'
সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদের একমাত্র নারী প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী বলেন, 'আমাদের দেশে নারীদের জন্য রাজনীতি কঠিন। আমি দেখাতে চাই, যোগ্যতা থাকলে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।' প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া দুই দিন আগে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তার জয়ের সম্ভাবনা বেড়েছে।
এস পদের অন্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন শিবির-সমর্থিত 'সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট'–এর মাজহারুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-সমর্থিত 'শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম'–এর তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম, 'সম্প্রীতির ঐক্য'–এর শরণ আহসান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী শাকিল আলী।
ভিপি পদে লড়ছেন গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে পরিচিতি পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আবদুর রশিদ জিতু, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-সমর্থিত প্যানেলের আরিফুজ্জামান, ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের শেখ সাদী হাসান এবং নাট্যকর্মী ও জুলাই আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘ।
এর আগে সর্বশেষ জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯২ সালে।