ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‎দীর্ঘ ৩৩ বছর পরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাকসু নির্বাচন

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় ১৩ ঘন্টা আগে
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক নিউজ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন আগামী বৃহস্পতিবার। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন।

‎দীর্ঘ ৩৩ বছর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাকসু নির্বাচন। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হল সংসদেরও নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার জাকসুর ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। নির্বাচনের মোট ভোটার ১১ হাজার ৮৯৭ জন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে জাকসু কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা সবার।

‎শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় প্রার্থীরা

‎গত ২৮ আগস্ট বিকেল চারটা থেকে জাকসু নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়েছিল। মঙ্গলবার রাত ১২টায় প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। এরপর কোনো প্রার্থী প্রচারণা চালালে তা আচরণবিধির লঙ্ঘন হবে। গতকাল প্রচারণার শেষ দিনে সকাল থেকেই প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেন প্রার্থীরা।

‎সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন এলাকায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেলের প্রার্থীদের প্রচারণা চালাতে দেখা যায়। প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আরিফুজ্জামান (উজ্জ্বল) প্রথম আলোকে বলেন, প্রচারণার শেষ দিনে তাঁরা বিভিন্ন অনুষদ, হল, শিক্ষার্থীদের আড্ডাস্থলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচারণা চালিয়েছেন। ভোটারদের কাছ থেকে তাঁরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন।

‎নির্বাচন সামনে রেখে জাকসু ভবনে চলছে মেরামতের কাজ।

‎দুপুরে বিভিন্ন অনুষদ ও ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শেষ সময়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল, ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেল, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্ট–সমর্থিত প্যানেল ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের একাংশের প্যানেল ‘সম্প্রীতির ঐক্যের’ প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাঁরা অনুষদ, বিভাগ, মুরাদ চত্বর, ছাত্রী হল-সংলগ্ন সড়কে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

‎স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবদুর রশিদ বলেন, ‘গত কয়েক দিনের প্রচারণায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। জয়-পরাজয় নয়, জাকসু নির্বাচন বাস্তবায়িত হচ্ছে, এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।’

‎জাকসু নির্বাচন ঘিরে সরগরম ক্যাম্পাস

‎ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্লাহ বলেন, ‘বিভিন্ন হলে প্রচারণা শেষ করেছি। আমাদের প্যানেল পরিচিতি ও ইশতেহার সব শিক্ষার্থীর মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছি। আশা করছি সুন্দরভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।’

‎জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়েছেন। এখন কোনো প্রার্থী প্রচারণা চালালে আচরণবিধি ভঙ্গ হবে।

‎কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা

‎ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। ২১টি ভোটকেন্দ্রে বুথ থাকবে ২২৪টি। ২১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ জন পোলিং কর্মকর্তা ও ৬৭ জন সহকারী পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফটকসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশের ১ হাজার ২০০ সদস্য মোতায়েন থাকবে। তাঁদের অধিকাংশই ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করবেন।

‎ভোটকেন্দ্রগুলোতে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। কেন্দ্রের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে প্রায় ৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এসব সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে কেন্দ্রের পরিবেশ নজরদারি করা হবে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি টিম, প্রক্টরিয়াল বডি ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পুরো ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন করবেন। দুজন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন। জাকসুর জন্য তিন পৃষ্ঠার এবং দুটি হলের জন্য দুই পৃষ্ঠার এবং বাকি হলগুলোর জন্য এক পাতার ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে।

‎ প্রচারণার শেষ দিনে অনুষদ, বিভাগ ও বিভিন্ন চত্বরে ঘুরছেন প্রার্থীরা

‎জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, একজন ভোটার কোনো কারণে ব্যালট পেপারে ভুল করার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জানালে তাঁকে নতুন ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এ কারণে কিছু অতিরিক্ত ব্যালট ছাপানো হয়েছে। এ ছাড়া ব্যালট সরবরাহকারীরা ১০০টি ব্যালটে এক সেট হিসাব করেন। এ কারণে সেট হিসেবে ব্যালট দেওয়ায় কিছু ব্যালট বেশি আনতে হয়েছে। তবে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী ব্যালট পেপার দেওয়া হবে। অতিরিক্ত ব্যালট পেপারের প্রয়োজন হলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। প্রার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় ব্যালট পেপার তিন পৃষ্ঠা, দুই পৃষ্ঠা ও এক পৃষ্ঠা ছাপানো হয়েছে।

‎সবার প্রত্যাশা অনেক

‎গণতান্ত্রিক চর্চায়, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে জাকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই। জাকসুতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রতিফলিত হবে বলে তাঁরা প্রত্যাশা করেন।

‎জাকসু: মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাঁচ প্যানেল

‎বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী নোমান বলেন, ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচনের বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচকভাবে দেখা প্রয়োজন। কারণ, জাকসু বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। প্রত্যাশা থাকবে জাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রতিনিধি বাছাইয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ করে তুলবেন। একই সঙ্গে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও তাঁদের পদের কার্যপরিধির আলোকে কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যায়তনিক, সাংস্কৃতিক ও পাঠ-বহির্ভূত কার্যক্রমকে গতিশীল করবেন।

‎ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীবান্ধব জাকসুর প্রত্যাশা। মিলে তাঁরা এ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাইক পরিবার। সেই পরিবারের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে জাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কাজ করবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগ কোনো নিয়মনীতি না মেনে ক্যাম্পাসে আধিপত্যবাদ কায়েমের লক্ষ্যে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছেন। তাঁরা চান জাকসুর মাধ্যমে এসব সংকট দূর হবে। সবার মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা গড়ে উঠবে।

‎প্রার্থী কমল দুজন

‎চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ১৭৯ জন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। তবে ভিপি পদে একজনের প্রার্থিতা বাতিল ও জিএস পদে একজন সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সেই হিসাবে জাকসুতে মোট ১৭৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

‎নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত ছাত্রত্ব না থাকায় প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের একাংশের প্যানেল সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

‎অন্যদিকে ছাত্রদলের প্যানেলে জায়গা না পেয়ে প্যানেল ঘোষণার দিন বিদ্রোহ করে জিএস পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া। তবে গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

ট্যাগস

‎দীর্ঘ ৩৩ বছর পরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাকসু নির্বাচন

আপডেট সময় ১৩ ঘন্টা আগে

ডেস্ক নিউজ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন আগামী বৃহস্পতিবার। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন।

‎দীর্ঘ ৩৩ বছর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাকসু নির্বাচন। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হল সংসদেরও নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার জাকসুর ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। নির্বাচনের মোট ভোটার ১১ হাজার ৮৯৭ জন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে জাকসু কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা সবার।

‎শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় প্রার্থীরা

‎গত ২৮ আগস্ট বিকেল চারটা থেকে জাকসু নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়েছিল। মঙ্গলবার রাত ১২টায় প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। এরপর কোনো প্রার্থী প্রচারণা চালালে তা আচরণবিধির লঙ্ঘন হবে। গতকাল প্রচারণার শেষ দিনে সকাল থেকেই প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেন প্রার্থীরা।

‎সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন এলাকায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেলের প্রার্থীদের প্রচারণা চালাতে দেখা যায়। প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আরিফুজ্জামান (উজ্জ্বল) প্রথম আলোকে বলেন, প্রচারণার শেষ দিনে তাঁরা বিভিন্ন অনুষদ, হল, শিক্ষার্থীদের আড্ডাস্থলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচারণা চালিয়েছেন। ভোটারদের কাছ থেকে তাঁরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন।

‎নির্বাচন সামনে রেখে জাকসু ভবনে চলছে মেরামতের কাজ।

‎দুপুরে বিভিন্ন অনুষদ ও ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শেষ সময়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল, ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেল, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্ট–সমর্থিত প্যানেল ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের একাংশের প্যানেল ‘সম্প্রীতির ঐক্যের’ প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাঁরা অনুষদ, বিভাগ, মুরাদ চত্বর, ছাত্রী হল-সংলগ্ন সড়কে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

‎স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবদুর রশিদ বলেন, ‘গত কয়েক দিনের প্রচারণায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। জয়-পরাজয় নয়, জাকসু নির্বাচন বাস্তবায়িত হচ্ছে, এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।’

‎জাকসু নির্বাচন ঘিরে সরগরম ক্যাম্পাস

‎ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্লাহ বলেন, ‘বিভিন্ন হলে প্রচারণা শেষ করেছি। আমাদের প্যানেল পরিচিতি ও ইশতেহার সব শিক্ষার্থীর মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছি। আশা করছি সুন্দরভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।’

‎জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়েছেন। এখন কোনো প্রার্থী প্রচারণা চালালে আচরণবিধি ভঙ্গ হবে।

‎কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা

‎ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। ২১টি ভোটকেন্দ্রে বুথ থাকবে ২২৪টি। ২১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ জন পোলিং কর্মকর্তা ও ৬৭ জন সহকারী পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফটকসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশের ১ হাজার ২০০ সদস্য মোতায়েন থাকবে। তাঁদের অধিকাংশই ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করবেন।

‎ভোটকেন্দ্রগুলোতে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। কেন্দ্রের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে প্রায় ৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এসব সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে কেন্দ্রের পরিবেশ নজরদারি করা হবে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি টিম, প্রক্টরিয়াল বডি ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পুরো ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন করবেন। দুজন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন। জাকসুর জন্য তিন পৃষ্ঠার এবং দুটি হলের জন্য দুই পৃষ্ঠার এবং বাকি হলগুলোর জন্য এক পাতার ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে।

‎ প্রচারণার শেষ দিনে অনুষদ, বিভাগ ও বিভিন্ন চত্বরে ঘুরছেন প্রার্থীরা

‎জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, একজন ভোটার কোনো কারণে ব্যালট পেপারে ভুল করার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জানালে তাঁকে নতুন ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এ কারণে কিছু অতিরিক্ত ব্যালট ছাপানো হয়েছে। এ ছাড়া ব্যালট সরবরাহকারীরা ১০০টি ব্যালটে এক সেট হিসাব করেন। এ কারণে সেট হিসেবে ব্যালট দেওয়ায় কিছু ব্যালট বেশি আনতে হয়েছে। তবে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী ব্যালট পেপার দেওয়া হবে। অতিরিক্ত ব্যালট পেপারের প্রয়োজন হলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। প্রার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় ব্যালট পেপার তিন পৃষ্ঠা, দুই পৃষ্ঠা ও এক পৃষ্ঠা ছাপানো হয়েছে।

‎সবার প্রত্যাশা অনেক

‎গণতান্ত্রিক চর্চায়, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে জাকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই। জাকসুতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রতিফলিত হবে বলে তাঁরা প্রত্যাশা করেন।

‎জাকসু: মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাঁচ প্যানেল

‎বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী নোমান বলেন, ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচনের বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচকভাবে দেখা প্রয়োজন। কারণ, জাকসু বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। প্রত্যাশা থাকবে জাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রতিনিধি বাছাইয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ করে তুলবেন। একই সঙ্গে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও তাঁদের পদের কার্যপরিধির আলোকে কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যায়তনিক, সাংস্কৃতিক ও পাঠ-বহির্ভূত কার্যক্রমকে গতিশীল করবেন।

‎ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীবান্ধব জাকসুর প্রত্যাশা। মিলে তাঁরা এ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাইক পরিবার। সেই পরিবারের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে জাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কাজ করবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগ কোনো নিয়মনীতি না মেনে ক্যাম্পাসে আধিপত্যবাদ কায়েমের লক্ষ্যে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছেন। তাঁরা চান জাকসুর মাধ্যমে এসব সংকট দূর হবে। সবার মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা গড়ে উঠবে।

‎প্রার্থী কমল দুজন

‎চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ১৭৯ জন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। তবে ভিপি পদে একজনের প্রার্থিতা বাতিল ও জিএস পদে একজন সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সেই হিসাবে জাকসুতে মোট ১৭৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

‎নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত ছাত্রত্ব না থাকায় প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের একাংশের প্যানেল সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

‎অন্যদিকে ছাত্রদলের প্যানেলে জায়গা না পেয়ে প্যানেল ঘোষণার দিন বিদ্রোহ করে জিএস পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া। তবে গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।